লাভপুরে শুরু হলো চারদিনের নাট্য মহোৎসব।

অনির্বান সেন, লাভপুরঃ-
‘প্যাহেলে কাবিল বনো, ফির কামিয়াবি তুমহারে পিছে আপনে আপ দৌড়েগী’। মনে পড়ছে থ্রী ইডিয়ট সিনেমায় আমীর খানের সেই বিখ্যাতো সংলাপটি। ঠিক এমনই ভাবে কিছু নাট্যকর্মী আর নাট্যমোদী দর্শকদের সাথে কথা বলতে বলতে নতুন নাট্যকর্মীদের উদ্দেশে হিমানী শিবপুরী বললেন ‘তু জিতনা কনটিনিউ করোগী, জিতনা চ্যালেঞ্জিং রোল মে কাম করোগী, তুমহারি অ্যাকটিং পাওয়ার উতনা ভি বারেগি। তুমারে ইলাকেকি বাহার কাঁহা কাঁহা কিয়া কিয়া হো রয়াহে হ্যায়, কৌন ক্যায়সে অ্যাকটিং কর রহে হ্যায় ও ভি দেখো। তব তো তুম অর ভি সোচ সাকোগী, তুমহারী অ্যাকটিং অউর ভি বড়িয়া হো গী……’।
গতকাল থেকে বীরভূমের লাভপুরে চার দিনের জন্য শুরু হয়ে গেল সর্ব ভারতীয় নাট্য মহোৎসবের। লাভপুর অতুল শিব পাঠাগারের পাশেই অতুল শিব মঞ্চে। আয়োজোক সংস্থা লাভপুরেরই বীরভূম সংঙ্কৃতিক বাহিনী। সংঙ্কৃতিক বাহিনী সদস্য সদস্যা অন্বেশা ঘোষ, হর্ষিতা ঘোষ, রূপা সূতার, কাজল মুখোপাধ্যায়রা জানালেন ‘১৯৯৯ সালে আমাদের এই প্রতিষ্টানটি প্রতিষ্টিত হয়। এবারে ২০ বছরে পা দিল বীরভূম সংঙ্কৃতিক বাহিনী। ২০ বছরের পদার্পণে এটি আমাদের চরম প্রাপ্তি’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উদ্বধোক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উত্তরাখন্ড গৌরব সম্মান, সঙ্গীত নাটক আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত বিশীষ্ট চলচিত্র অভিনেতা ও নাট্যশিল্পী হিমানী শিবপুরী। ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য শিক্ষক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস মন্ত্রকের যুগ্ম সচীব ও বেনফিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিধান রায়, নিভা আর্টসের কর্ণধার সমর মিত্র, বিশিষ্ট কথ্থক শিল্পী উমা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন ড. সুকুমার চন্দ্র, হরিপ্রসাদ সরকার, সুব্রত নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অতনু বর্মণ, প্রদীপ কবিরাজ, নির্মল হাজরা, তীর্থজীৎ ঘোষ, অনিন্দ আচার্য, বিজয় দাস সহ আরো অনেকে।
প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্ববোধনের পর ঁসত্যনারয়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে পুষ্প প্রদান করা হয়।’আমার মাথা নত করে দাও গো তোমার চরণ ধূলার পরে’ -উদ্ববোধনী সঙ্গীত হিসাবে এই গানটি গান বিধান রায়।
উদ্ববোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হিমানী শিবপুরী বলেন ‘এই বাংলায় আসতে পেরে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। এই মাটিতে যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতন মানুষরা জন্মেছেন, সেখানে আমি আমার নাটক করতে পারব – সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবান’,
অমিতবাবু তাঁর বক্তব্যে বলেন ‘নাটক করা মানে ভালো মানুষ হওয়া। ভারতের ঐতিহ্য অনুযায়ী গুরুশিষ্য পরম্পরা বাজায় রাখা’। বীরভূম সংঙ্কৃতিক বাহিনীর সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি বলেন ‘নাটকের জন্যে সারা ভারতের বিভিন্ন জাইগায় আমি গিয়েছি – কিন্তু এমন আন্তরীকতা কোথাও পেলাম না’।
বীরভূম সংঙ্কৃতিক বাহিনীর নাট্য মহোৎসবের প্রথমদিনে অনুষ্ঠিত হলো মুম্বাই, মহারাষ্ট্রের হিন্দী ভাষার নাটক ‘আকেলী’। হিমানী শিবপুরীর সাথে অভিনয় করলেন জেলার নাট্যকর্মী অন্বেশা ঘোষ, কাজল মুখোপাধ্যায়রা। হিমানী শিবপুরীর অসাধারণ অভিনয় সাথে কাজল মুখার্জীর সারা নাটকে একটি মাত্র সংলাপ ‘বিনা নিমন্রণ কে যানা ন্যাহি’ বুঝিয়ে দিল আমাদের সমাজ এখনো পিতৃতান্ত্রিক। মহিলারা পুরুষের আজ্ঞাবাহী মাত্র। যদিও পরে দর্শকের প্রশ্নের উত্তরে বললেন ‘পুরুষদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই মহিলাদের সমাজে জাইগা করে নিতে হবে, তবে সে লড়াইটা কোমড় বেঁধে লড়াই নয়। পুরুষদেরকে বুঝিয়ে সমাজে মেয়েরা নিজেদের জাইগা করে নিতে পারেন। অশোযোগীতা নয়, সহযোগীতার মাধ্যমেই এই লড়াই লড়তে হবে, জিততে হবে’।
কেন এই সর্ব ভারতীয় নাট্য মহোৎসবের আয়োজন? আয়োজোক সংস্থা লাভপুরের বীরভূম সংঙ্কৃতিক বাহিনীর কর্ণধার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বললেন ‘সারা ভারতের নাটকের সাথে জেলার বিভিন্ন গ্রাম শহরের মানুষের পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যেই এই নাট্য মহোৎসবের আয়োজন। সাথে আমাদের জেলার নাট্যকর্মীরা কতটা কী করতে পেরেছি সেটাও ভারতের বিশিষ্ট নাট্যকার, নাট্য অভিনেতাদের দেখানো’। এটা কি জেলার যে কোনো বড়ো শহরে করা যেতে পারত না? তাতে তো জেলার দর্শকদের, জেলার নাট্যকর্মীদের আরো ভালো হতো। উত্তরে উজ্জ্বলবাবু বললেন ‘অবশ্যই পারত। আসলে এই বীরভূম জেলার প্রথম নাটকটি হয় লাভপুরের বিশিষ্ট নাট্যকার নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় উনারই লিখিত নাটক ‘রাতকানা’। যেখানে অভিনয় করেছিলেন এই লাভপুরের মানুষরা। ১৯১৬ সালে। সে সময় এই জেলার জেলা শাশক ছিলেন শ্রী গুরুসদয় দত্ত মহাশয়। সিউড়িতে যে মঞ্চে নাটকটি হয়েছিল সেই মঞ্চটির নামও করা হয়েছিল গুরুসদয় দত্ত মঞ্চ’।