মমতার প্রতিশ্রুতিই সার, চিকিৎসক অভাবে বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তারাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ১৫ জুন :
যে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকের বদলি রুখতে গিয়ে তিনজন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছিল, সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন চালাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট ও নার্সরা। ফলে এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকারে মানুষের মধ্যে। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও তা এখন শুধু স্মৃতি।
পুরনো স্মৃতি থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৮ মার্চ। সে সময় বীরভূমের তারাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ছিলেন অভিজিৎ রায় চৌধুরী। অল্প দিনের মধ্যে তিনি গ্রামবাসীদের কাছে প্রিয় চিকিৎসক হয়ে ওঠেন। ঘটনার দিন কয়েক আগে তাদের প্রিয় চিকিৎসককে বদলি করে সরকার। চিকিৎসকের বদলি রুখতে কয়েকটি গ্রামের মানুষ আন্দোলন শুরু করে। দুদিন ধরে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের আটক করে চলে আন্দোলন। এরপরেই আন্দোলনকারীদের হঠাতে সরাসরি গুলি চালায় পুলিশ। সেই গুলিতে তিন তরতাজা যুবকের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আজও সরকারি মামলায় আদালত চত্বরে চক্কর কাটছেন অনেকে। সে সময় বিরোধী দলনেত্রী গ্রামে গিয়ে হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন। সেই মমতার আমলেই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল অবস্থা। বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছেন ২ জন নার্স এবং একজন করে ফার্মাসিস্ট, হোমিও চিকিৎসক, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। মাস চারেক আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে একমাত্র চিকিৎসককে তুলে নেয় স্বাস্থ্য দফতর। ফলে ফার্মাসিস্ট ও নার্সরা এখন রোগীদের ভরসা। নার্স মঞ্জু মণ্ডল বলেন, “আমরা দুজন নার্স রয়েছি। এখন ফার্মাসিস্ট রোগী দেখেন। তিনি না থাকলে আমরা যতটা সম্ভব ওষুধপত্র দিয়ে থাকি”। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে আসা হাসিনা বেগম, মহাদেব মালরা বলেন, “চিকিৎসক না থাকায় পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সামান্য কিছু হলেই ছুটতে হচ্ছে রামপুরহাটে। অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা পাঠাতে হবে”। আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ চিত্তরঞ্জন মণ্ডল, “আমরা চিকিৎসক রুখে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি। সেই স্মৃতি আজও শরীরে নিয়ে ব্যয়ে চলেছি। সে সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে সব বেমালুম ভুলে গিয়েছেন। ফলে আজও আদালতে চত্বরে চক্কর কাটতে হচ্ছে। আর চিকিৎসক না থাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তবে এনিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।